পশ্চিমবঙ্গের
লোকশিল্প ও শিল্পীসমাজ
লেখকঃ
তারাপদ সাঁতরা
প্রকাশকঃ
লোকসংস্কৃতি আদিবাসী সংস্কৃতিকেন্দ্র
তথ্য
ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
মধুসূদন
মঞ্চ, ঢাকুরিয়া। কলকাতা-৭০০০৬৮। ডিসেম্বর,২০০০।
দাম-১৩০
টাকা। ISBN: 81-87360-22-4
তারাপদ
সাঁতরার লেখা “পশ্চিমবঙ্গের লোকশিল্প ও শিল্পীসমাজ” বইটি বাংলার সামাজিক চিরায়ত
শিল্প ভাবনা ও শিল্পী গোষ্ঠী তথা সমাজজীবনে অচেতনে জড়িয়ে থাকা শিল্পীসত্ত্বা মূলতঃ
নারীদের বিগত শতাব্দী পর্যন্ত প্রচলিত আন্তঃপুরকেন্দ্রিক জীবনে বয়ে চলা শিল্প মননের
এক তথ্য সমৃদ্ধ দলিল।
আটিটি
আধ্যায়ে লেখক তার ঐতিহাসিক সত্ত্বার মেধায় ও বঙ্গভূমির লোকশিল্পের প্রতি আন্তরিক
ভালবাসায় বিভিন্ন লোকশিল্প যা আপাত দৃশ্যে অতি তুছ উপাদানে নির্মিত, রোজকার জীবনে
প্রায় আমল না দেওয়া বস্তর মধ্যে ছড়িয়ে থাকা আমাদের লোকশিল্প, তার শিল্পী ও তার
সামাজিক বিবর্তনকে বিবৃত করেছেন তার মেধাবী টিপ্পনীসহ।
আট
অধ্যায়ে বাস্তুশিল্প, লোকচিত্রকলা, চিত্র-ঊৎকীর্ণ মৃৎপাত্র, গৃহসামগ্রী, পুতুল
খেলনা, শোলার কারুকার্য, আচার অনুষ্ঠান কেন্দ্রিক মৃৎশিল্প, আঞ্চলিক লোকনৃত্যে
ব্যবহৃত মুখোশশিল্প এবং তেরোটি বিষয়ভিত্তিক পরিশিষ্ট বিষয় বৈচিত্র্যে যেমন অসাধারণ
তেমন কৌতুহলোদ্দীপক, যেমন ‘পশ্চিমবঙ্গের পটুয়া চিত্রকরঃ সামাজিক পরিবর্তন’ অথবা ‘বাঙালী
পল্লী চিত্রকরদের দাবি’ এই পরিশিষ্টের বিষ্যগুলি বাংলার সমাজে শিল্পীদের যুগযুগ
ধরে শোষিত বঞ্চিত এবং সামাজিক অবহেলা অসম্মান এবং পরিবর্তিত সময়ে পরিচয় সঙ্কট (Identity
Crisis)কে চিহ্নিত করেছে।
এই
পুস্তকে বর্ণিত অধ্যায়গুলি বাংলার সমাজজীবনের আরেক বৈশিষ্টকে তুলে ধরে - বাঙালী জাতিগতভাবে ভাবপ্রবণ, শিল্পী ও
সূক্ষ্মরসবোধের পূজারী। তাদের নান্দনিক সত্ত্বা তাই অতিতুচ্ছ উপাদান থেকেও তৈরী
করে এসেছে শিল্প সম্মত জীবনের ছাঁচ কিন্তু সেই প্রচেষ্টা আড়ম্ব্ররহীন অ-রাজকীয় আর
এই জীবনের পরতে শিল্পকে জড়িয়ে নেওয়ার মূলকান্ডারী – নারী।
গৃহশিল্প
সামগ্রী অধ্যায়ে বর্ণিত কাঁথা, কুঙ্কে, পানেরবাটা, জাঁতি, কাজললতা,চিরুনি,সি৬দুর
কৌটো, হাতপাখা, শিকা শিল্প, চারবাটি, নকশি আসন, কড়িরসাজ ও মাদুর শীতল্অপাটি, কাগজ
কাটাই নকশা, চন্দ্রপুলি ও আমসত্ত্বের ছাঁচ – আমাদের শোনায় সেইসব অন্তঃপূর
বন্দিনীদের কাহিনী যাদের মন ও কল্পনায় পাখা মেলতে চায় সৃজনের মধ্যে দিয়ে তাই তারা তাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের
প্রতিটি বস্তুকেই সুন্দর দেখতে চায়।যদিও সমাজ পরিবর্তন, প্রযুক্তির প্রসার,
অতিব্যস্ত নগরকেন্দ্রিক জীবন থেকে এই বোধেরা আজ ছুটি নিয়েছে, রয়ে গেছে যাদুঘ্রের
প্রত্নসামগ্রী হয়ে।
এই
পুস্তক বাংলার লোকশিল্পীদের যে কাহিনী বিবৃত করেছে তা যেমন দুষ্প্রাপ্য তেমনই
লেখকের ব্যাখ্যা ততটাই প্রয়োজনীয় সেই অখ্যাত, অচেনা হারিয়ে যাওয়া শিল্পীকূলকে
চিনতে।
পরিশষ্টে
বর্নিত গ্রন্থপঞ্জি, শতাধিক চিত্র পুস্তকটিকে বাংলার অবলুপ্ত প্রায় লোকশিল্প যা
বাংলার সমাজজীবনের অন্যতম ভিত্তি তার এক অনন্য দলিলে পরিণত করেছে। বাঙালী যদি
শিকড়ের সন্ধান করে তবে এই পুস্তক একটি আলোকবর্তিকা।