পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতী গণধর্ষণ ও এক নারীর প্রতিক্রিয়া
প্রথম ভাগ
আমি পশ্চিমবঙ্গবাসী একজন নারী এছাড়া আমার কোনো আত্মপরিচয় ছিল, আছে বা থাকবে কিনা আমি জানিনা। বিগত কয়েক মাস যাবৎ আমার চারপাশের জগৎটা ক্রমশ হিংস্র হয়ে উঠেছে টের পাচ্ছিলাম তা ব্যক্তিগত পরিসরে হোক বা কাজের জগতে। পড়াশোনার কাজে, বেড়ানোর নেশায় বাংলার বাইরে আমি বছরে দুবার তিনবা পা বাড়াই এবং সেটা প্রায় সময় একা। একা মেয়ে পথচলার অভিজ্ঞতা আমার আছে। কিন্তু ভারতবর্ষের অন্য রাজ্যের থেকে বরাবর পশ্চিমবঙ্গকে অনেকবেশি মননশীল ও কোমল বলেই বোধ হয়েছে এবং পরোক্ষ শোষণ,হেনস্থা থাকলেও সামাজিক পরিসরে একটা ভদ্রতার মোড়কে ঢাকা থাকত। কিন্তু ভারতবর্ষের মতো এরাজ্যও ক্রমশঃ নারীর প্রতি পাশবিক অত্যাচারে মত্ত হয়ে উঠেছে তা যেমন রোজকার অভিজ্ঞতায় অনুভব করেছি তেমনই সংবাদ শিরোনাম দেখে নিশ্চিত হয়েছি ভুল ভাবছি না। প্রথমে মনে হতো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, তারপর নিত্যকার। কেন এমন হল বা হচ্ছে সে উত্তর তো খুঁজতে হবেই কিন্তু যে ঘটনা আমাকে বেদনাতে স্তব্ধ করেছে, নৃশংসতার কথা ভেবে শিহরিত করেছে তা হল আমার বাসস্থান থেকে মাত্র কিছু কিলোমিটার দুরত্বা এক ২০ বছরের আদিবাসী তরুণীকে তার গোষ্ঠীর পঞ্চায়েত জরিমানা ও গণধর্ষণের শাস্তি দিচ্ছে ভিন্ন ধর্মের যুবকে ভালোবাসার অপরাধে আর চিল শকুনের মতো ঝাঁপ দিচ্ছে তারি স্বগোষ্ঠীর আত্মীয়, প্রতিবেশীরা যাদের মধ্যে সে এতদিন বেঁচেছিল আপনজন মনে করে। তার পরিবার তার আর্তচিৎকার শুনেছে কিন্তু রক্ষা করতে পারেনি। এই পাশবিক, অমানবিক ঘটনা যেমন আমাকে বিহ্বল করেছে তার গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রতিক্রিয়া, তাদের আচরণ। তারা এই ঘটনার সমর্থনকারী, পরোক্ষ মদতদাতা। প্রাথমিক বিহ্ববলতা কাটিয়ে ওঠার পর আমি বুঝতে চেয়েছি এরা আদৌ কোনোদিনও মনুষ্যত্বে বিশ্বাসী ছিল, মানবিক ছিল না এরা আবহঅমানকাল ধরে এমনই।
আমার মনে হয়েছে এই ধরনের ঘটনা যে এই উপমহাদেশে, এ সমাজে বিরল তা কখনোই নয়। আকছার না ঘটলেও অতীতে বহুবার যে এমন ঘটেছে সে তো মুখতারণ মাঈ এর ঘটনা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তখন হয়তো ভেবে সান্ত্বনা পেয়েছিলাম সীমান্তের ওপার - এপারে এমন কী করে হবে এখানে তো গ্ণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত, এ ছিল আমার মূর্খের স্বর্গবাস। প্রযুক্তির দৌলতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় আর কিছু না হোক অত্যাচারের খুঁটিনাটি বিবরণ ঘরে বসে অবগত হওয়া যায় আর সেই অবগতিই আমাকে সদ্য অতীত আরো কিছু ঘটনার কথা মনে করায়, কিছুদিন আগে এক যুবক প্রকাশ্য দিবালোকে তার বোনের মাথা কেটেছিল ভালোবাসার অপরাধে, পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে এরাজ্যেই। তাকে অনুতপ্ত হতে দেখা যায়নি। কামদুনিতে পরিচিত, প্রতিবেশী স্বজনেরাই ধর্ষণ করে খুন করেছিল তরুণীকে।প্রতিটি ঘটনাই নিজ নিজ নৃশংসতার বৈশিষ্ঠ্যে বিশিষ্ঠ কিন্তু একটি বিষয় সবঘটনাতেই লক্ষণীয় নারীর প্রতি পুরুষের, পুরুষতন্ত্রের তীব্র আক্রোশ। এই শেষ ঘটনাটিতে সেই আক্রোশ গোষ্ঠীগত সিলমোহর পেয়েছে ইযা আরো ভয়ানক। কোনো সামাজিক ব্যাধি, যদি সেই সমাজে সামাজিক শাস্তিবিধানের প্রথা হয়ে দাঁড়ায় তবে তা অকল্পনীয় এক বিপর্যয় নিয়ে আসতে বাধ্য। আজ আমার সমাজ দ্বিধাবিভক্ত নারী ও পুরুষ এই দুই শিবিরে নয় বরং নারীকে মানুষ বলে একজন জীবন্ত ব্যক্তি স্বত্তা বলে মান্যতা দেওয়া মানুষ ও পাশবিক প্রবৃত্তিকে আঁকড়ে ধরা পুরুষতন্ত্রে বিশ্বাসী কিছু মানুষ (যদিও এদের মধ্যে কোনো মানবিকতার লেশমাত্র পাওয়া যাবে না)। এ লড়াই সভ্যতার নবতম ও প্রবলতম সংকট। আমরা যারা প্রথম শিবিরের যোদ্ধা তারা এই মূহূর্তে আহত ও ভীষণভাবে আক্রান্ত কিন্তু আমরা বিশ্বাস হারায়নি, এই গভীরতম সংকটের সময় আমাদের আরো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যুক্তিবাদী, মানবিক হতে হবে।শত্রু পক্ষের হিংসা বা প্রতিশোধের আগুনে ঝলসানো নয় আগুনকে আলো করে তোলার সাধনায় ব্রতী হতে হবে। আর প্রথম পদক্ষেপ ভয়হীনতা। নির্ভয়া।
আমার মনে হয়েছে এই ধরনের ঘটনা যে এই উপমহাদেশে, এ সমাজে বিরল তা কখনোই নয়। আকছার না ঘটলেও অতীতে বহুবার যে এমন ঘটেছে সে তো মুখতারণ মাঈ এর ঘটনা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তখন হয়তো ভেবে সান্ত্বনা পেয়েছিলাম সীমান্তের ওপার - এপারে এমন কী করে হবে এখানে তো গ্ণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত, এ ছিল আমার মূর্খের স্বর্গবাস। প্রযুক্তির দৌলতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় আর কিছু না হোক অত্যাচারের খুঁটিনাটি বিবরণ ঘরে বসে অবগত হওয়া যায় আর সেই অবগতিই আমাকে সদ্য অতীত আরো কিছু ঘটনার কথা মনে করায়, কিছুদিন আগে এক যুবক প্রকাশ্য দিবালোকে তার বোনের মাথা কেটেছিল ভালোবাসার অপরাধে, পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে এরাজ্যেই। তাকে অনুতপ্ত হতে দেখা যায়নি। কামদুনিতে পরিচিত, প্রতিবেশী স্বজনেরাই ধর্ষণ করে খুন করেছিল তরুণীকে।প্রতিটি ঘটনাই নিজ নিজ নৃশংসতার বৈশিষ্ঠ্যে বিশিষ্ঠ কিন্তু একটি বিষয় সবঘটনাতেই লক্ষণীয় নারীর প্রতি পুরুষের, পুরুষতন্ত্রের তীব্র আক্রোশ। এই শেষ ঘটনাটিতে সেই আক্রোশ গোষ্ঠীগত সিলমোহর পেয়েছে ইযা আরো ভয়ানক। কোনো সামাজিক ব্যাধি, যদি সেই সমাজে সামাজিক শাস্তিবিধানের প্রথা হয়ে দাঁড়ায় তবে তা অকল্পনীয় এক বিপর্যয় নিয়ে আসতে বাধ্য। আজ আমার সমাজ দ্বিধাবিভক্ত নারী ও পুরুষ এই দুই শিবিরে নয় বরং নারীকে মানুষ বলে একজন জীবন্ত ব্যক্তি স্বত্তা বলে মান্যতা দেওয়া মানুষ ও পাশবিক প্রবৃত্তিকে আঁকড়ে ধরা পুরুষতন্ত্রে বিশ্বাসী কিছু মানুষ (যদিও এদের মধ্যে কোনো মানবিকতার লেশমাত্র পাওয়া যাবে না)। এ লড়াই সভ্যতার নবতম ও প্রবলতম সংকট। আমরা যারা প্রথম শিবিরের যোদ্ধা তারা এই মূহূর্তে আহত ও ভীষণভাবে আক্রান্ত কিন্তু আমরা বিশ্বাস হারায়নি, এই গভীরতম সংকটের সময় আমাদের আরো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যুক্তিবাদী, মানবিক হতে হবে।শত্রু পক্ষের হিংসা বা প্রতিশোধের আগুনে ঝলসানো নয় আগুনকে আলো করে তোলার সাধনায় ব্রতী হতে হবে। আর প্রথম পদক্ষেপ ভয়হীনতা। নির্ভয়া।