রাত
পোহালে আমার দেশের স্বাধীনতার
বয়স হবে ৭১, সেই
সাথে দেশ বিভাজনেরও ৭১। এই
৭১ -এর
প্রায় অর্ধেকের বেশি সময় আমার
দেশকে আমি খুব কাছ থেকে বিবর্তিত
হতে দেখেছি। আমার জন্ম ১৯৮০
-র
পশ্চিমবঙ্গে। তখন এই রাজ্য
জুড়ে বামপন্থী ক্ষমতায়নের
ভরা জোয়ার। আগের দশক উত্তাল
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে,
নানা রাজনৈতিক
গণআন্দোলনে। অর্থাৎ
একটা সজীব রাজনৈতিক-সামাজিক
পরিবেশ।
সাধারণ
শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারেও
স্বদেশ চেতনার একটা ফল্গুধারা
তখনও প্রবাহিত। তখনও দেশবাসীর
কাছে স্বাধীনতা যোদ্ধা,
বিপ্লবীরা
দেশনায়ক। আমার কাছেও মহাজাতিসদনের
দেওয়ালে টাঙানো বিপ্লবী শহীদের
তৈলচিত্ররা পরিচিত আপনজন।
তারপর নয়ের দশক থেকে দেশ-কালের
ছন্দ বদলালো,
স্বাচ্ছন্দ্য
এলো আর এলো বিপননের পসরা। অনেক
ভোগ্যপন্যের আতিশয্যে,
অগাধ বিনোদনের
হাতছানিতে আর আরো ভালো থাকার
নেশায় আমার শৈশবের 'দেশ'
কোথায় হারিয়ে
গেল। আমরা বিশ্বায়িত হলাম,
তবে শৈশবে
রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীর
বিশ্বসাথে যোগের যে সংস্কৃতিকে
জেনেছিলাম তার সাথে এর কোনো
মিল ছিলনা। নিজেকে কেমন শিকড়হীন
কচুরিপানার মতো মনে হতো তবু
খুঁজে ফিরেছি আমার দেশকে আমার
মতো করে। অনুভব করেছি সেই
দেশকে ভালোবাসার সেই অবেগ
আছে, হারিয়ে
যায়নি তবে কেমন যেন চ্ছন্নছাড়া,
দিশেহারা।
ইদানীংকালে
একটা বদলের স্পন্দন অনুভব
করি নতুন প্রজন্মের মধ্যে,
আপাত পশ্চিমমুখী
জীবনযাত্রার মাঝেও তারা তাদের
সংস্কৃতির শিকড় খুঁজে চলেছে
তাদের মতো করে। গ্রন্থাগারিক
হয়ে দেখছি আজকের তরুন প্রজন্ম
মুক্ত মনে দেশকে খুঁজছে বইয়ের
পাতায়, ওয়েব
ব্রাউজারে।