মোট পৃষ্ঠাদর্শন

বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১

রান্নাবাটি কুটনোকাটি

রান্না শব্দটা আমাদের রোজকার জীবন যাপনের সাথে মিশে থাকা একটা মানবিক সৃজনশীলতা। গুহাবাসী, বনবাসী মানুষ নিজের জীবনকে যখন নিজের মতো করে নিতে চেয়েছিল তার প্রথমধাপেই ছিল রান্না। প্রকৃতির দেওয়া খাদ্যসামগ্রীকে মানুষ নিজের পছন্দের স্বাদ গন্ধের অনুকূল করে নিয়েছিল নিজের বুদ্ধি, সৃজনশীলতা দিয়ে। চাষ আবাদ, পোশাক তৈরির মতো মেয়েদের সাথে রান্নার যোগ বড়ো নিবিড় হয়তো সন্তানকে পালন করতে হয় বলেই। এই কয়েক হাজার বছরে রান্না আর নারী কেমন মিশে গেছে। পুরুষেরা যদিও বীরবিক্রমে রান্না করে তবে নারীর রান্নার সাথে কেমন ঘরকন্না মিশে আছে। আমাদের মতো সাধারণ পরিবারের মেয়েরা তার শৈশবের খেলাঘরেই রান্নার প্রথম পাঠ নেয় আর হয়তো সেই খেলাটাকেই তার আজীবনের সাথী করে নেয়। ভালোবাসার মানুষকে রান্না করে খাওয়ানোর যে সুখ সেটা সে উপভোগ করতে শিখে যায়। আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনদশক আগে আমার খেলনার বাক্স ভরা থাকত খেলনা রান্নার সরঞ্জামে। বাগানের লুচি পাতা, ঘাসের দানা,ইটের টুকরো আর মায়ের রান্নাঘর থেকে জোগাড় করা হরেক ফেলা জিনিস দিয়ে তৈরি হতো খেলনা খাবার দাবার। বাবাকে, বন্ধুদের খেতেও হতো মিছিমিছি। তবে এই মিছিমিছির রান্নাবাটিতে জানা হয়ে গিয়েছিল 'রান্না' নামক বিষয়টির দর্শন ও আনন্দ। আধুনিক জীবনযাত্রা, প্রযুক্তি রান্নাকে আরো উপভোগ্য করেছে। আমার পছন্দ নিরামিষ বাঙালি রান্না যেমন লাউখোসা বাটা, ফুলকপির বাটিচচ্চড়ি,বড়ির ঝাল এইসব আরকি যা খুব সহজে সামান্য উপকরনেই বেশ সুস্বাদু হয় অনেকটা আমাদের মতো আটপৌড়ে মেয়েদের জীবনের মতো। সেইজন্যই বড়ো কারখানায় তৈরি খাবারের চাইতে আমাদের জীবনের কুটীরশিল্প যার আয়োজন কম প্রয়োজন বেশি সেই রান্নাবাটি কুটনোকাটির জীবন বহমান থাক,সভ্যতা এগিয়ে চলুক।