সারি সারি সব হারানো মানুষ চলেছে নিজেরদের ফেলে আসা ঘরে, মাটির কাছে আশ্রয়ের আশায়। এ যেন মা বসুন্ধরার কাছে সীতার ফিরে যাওয়া। তবে এই প্রত্যাবর্তন তখনই অর্থবহ হবে যদি তা শুকিয়ে যাওয়া গ্রামীণ জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে পারে। পুরানো আধা সামন্ততান্ত্রিক গ্রামীণ সমাজ কাঠামোয় তা সম্ভব নয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সমান অধিকার আর পারস্পরিক শ্রদ্ধায় গঠিত সমাজ কাঠামোয় একমাত্র তা সম্ভব। সব হারিয়ে এই ফিরে আসা মানুষ যদি গ্রাম পুনর্গঠনের কাজে যোগ দেয় তবেই তা বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু করা দেবে নেতৃত্ব ? কোথা থেকে আসবে গ্রাম স্বরাজের নতুন ভাবনা, কর্মীর দল যারা হাত মেলাবে প্রান্তিক মানুষজনের সাথে, দেবে নতুন জীবনের মন্ত্র? এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, কাজ শুরু হয়েছিল গ্রাম স্তরে কিন্তু সফল হয়নি। তাঁদের এই বিফলতাই বলে দেয় সৎ প্রচেষ্টা সফল হয়, স্থায়ী হয় তখনই যখন পরিপার্শ্ব সহায়ক হয় নয়তো সেই প্রচেষ্টার মরুদ্যানকে গ্রাস করে শত শত বছরের শোষণকারীদের আক্রোশ। আমাদের ভারতবর্ষের মূল সমস্যা তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের বৃহত্তর সমাজ থেকে, পিছিয়ে পড়া মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা যা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আরো বেশি হয়েছে। বিগত কয়েক দশক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সব সামাজিক দায় থেকে মুখ ফিরিয়ে আত্মকেন্দ্রিক স্বচ্ছল, সুখী হওয়ার সাধনায় মন দিয়েছিল। তারা হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসঙ্গ হয়েও সফল হয়েছে কিন্তু গ্রামে, শহরে দেশ গড়ার কারিগরের অভাবে সমাজ বদলের সব স্বপ্ন ধাক্কা খেয়েছে, হারিয়ে গেছে। আজ আবার ভারত তার নবীন, শিক্ষিত মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে যারা কৃষক, কারিগরদের যুগসঞ্চিত জ্ঞানের ভান্ডারকে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদের আধুনিক জ্ঞান, প্রযুক্তির সাথে সেতু বাঁধবে। গ্রাম শহরের মনের দূরত্ব ঘুচিয়ে তৈরি করবে নতুন জীবনশৈলী যার ভিত রবীন্দ্রনাথের শ্রীনিকেতনের স্বপ্নে, গান্ধীর গ্রাম স্বরাজে।তারা প্রকৃতিকে শোষণ নয় প্রকৃতির সংরক্ষণের সংস্কৃতি গড়ে তুলবে।
মোট পৃষ্ঠাদর্শন
শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০
রবিবার, ৩ মে, ২০২০
সত্যজিৎ রায় ১০০
১০০ বছর পার অনেকখানি সময় চলে গেছে , বদলেছে প্রেক্ষাপট। বিগত শতাব্দীতে স্বাধীনতা আন্দোলন, বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশভাগ, স্বাধীনতা, গণ আন্দোলন, বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আমাদের দেশ, সমাজকে নিয়ে গেছে নানা ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে দিয়ে। সময়ের এই কঠিন মন্থন আমাদের থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছিল ঠিকই তবে সৃষ্টি করেছিল কিছু অমূল্য মানব রত্ন। সত্যজিৎ রায় এমনই এক অমূল্য মানব রত্ন। আজ ২রা মে তাঁর শততম জন্মদিন, এই পণ্য সর্বস্ব, মনন চর্চার দৈন্যতার সময়কালে তাঁর রেখে যাওয়া মেধা চর্চা, সৃষ্টিশীলতার উত্তরাধিকারকে ফিরে দেখতে ইচ্ছা হয়। স্বাধীনতা পূর্ব ইংরেজ শাসনাধীন ভারতবর্ষে প্রায় দুশতাব্দী প্রগতিশীল ভারতীয়রা সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে সংস্কারের মধ্য দিয়ে যে মুক্ত চিন্তার দেশ গড়তে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ ছিলেন সেই সাধনার উত্তরসূরি।আজ আমরা যখন চিন্তা করতে, প্রশ্ন করতে ভুলে যাচ্ছি তখন সত্যজিৎ-এর হীরক রাজার দেশের মগজ ধোলাই যন্ত্রের কথা মনে পড়ে। রবীন্দ্রনাথের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বহন করে রক্তকরবীর বার্তা নূতন করে তিনি বললেন হীরক রাজার দেশে চলচ্চিত্রে। গুপী গাইন বাঘা বাইন গাইল 'নহি যন্ত্র, আমি প্রানী'। তাঁর সমস্ত সৃষ্টিতে তিনি মানব দরদী। সাহিত্যিক সত্যজিৎ আমাদের শৈশবকে অন্য রঙে রাঙিয়ে ছিলেন। আগুন্তুকের সাত্যকির মতো শিখেছিলাম কখনো কূপমন্ডুক হব না। বিশ্বজনীনতার এক অন্য ভাষা শিখেছিল আমাদের প্রজন্ম। কিন্তু আজ প্রতি মূহূর্তে মনে হয় সত্যজিৎ-এর সৃৃৃষ্টির সেই মূল্যবোধ আজকেের 'আমাকেে দেখুন' সমাজে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আমরা কী সন্ধান পাব সেই হারানো মানিকের?
[আলোকচিত্রটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)