মোট পৃষ্ঠাদর্শন

শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

ফিরে চল মাটির টানে

সারি সারি সব হারানো মানুষ চলেছে নিজেরদের ফেলে আসা ঘরে, মাটির কাছে আশ্রয়ের আশায়। এ যেন মা বসুন্ধরার কাছে সীতার ফিরে যাওয়া। তবে এই প্রত্যাবর্তন তখনই অর্থবহ হবে যদি তা শুকিয়ে যাওয়া গ্রামীণ জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে পারে। পুরানো আধা সামন্ততান্ত্রিক গ্রামীণ সমাজ কাঠামোয় তা সম্ভব নয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সমান অধিকার আর পারস্পরিক শ্রদ্ধায় গঠিত সমাজ কাঠামোয় একমাত্র তা সম্ভব। সব হারিয়ে এই ফিরে আসা মানুষ যদি গ্রাম পুনর্গঠনের কাজে যোগ দেয় তবেই তা বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু করা দেবে নেতৃত্ব ? কোথা থেকে আসবে গ্রাম স্বরাজের নতুন ভাবনা, কর্মীর দল যারা হাত মেলাবে প্রান্তিক মানুষজনের সাথে, দেবে নতুন জীবনের মন্ত্র?  এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, কাজ শুরু হয়েছিল গ্রাম স্তরে কিন্তু সফল হয়নি। তাঁদের এই বিফলতাই বলে দেয় সৎ প্রচেষ্টা সফল হয়, স্থায়ী হয় তখনই যখন পরিপার্শ্ব সহায়ক হয় নয়তো সেই প্রচেষ্টার মরুদ্যানকে গ্রাস করে শত শত বছরের শোষণকারীদের আক্রোশ। আমাদের ভারতবর্ষের মূল সমস্যা তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের বৃহত্তর সমাজ থেকে, পিছিয়ে পড়া মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা যা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আরো বেশি হয়েছে। বিগত কয়েক দশক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সব সামাজিক দায় থেকে মুখ ফিরিয়ে আত্মকেন্দ্রিক স্বচ্ছল, সুখী হওয়ার সাধনায় মন দিয়েছিল। তারা হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসঙ্গ হয়েও সফল হয়েছে কিন্তু গ্রামে, শহরে দেশ গড়ার কারিগরের অভাবে সমাজ বদলের সব স্বপ্ন ধাক্কা খেয়েছে, হারিয়ে গেছে। আজ আবার ভারত তার নবীন, শিক্ষিত মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে যারা কৃষক, কারিগরদের যুগসঞ্চিত জ্ঞানের ভান্ডারকে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদের আধুনিক জ্ঞান, প্রযুক্তির সাথে সেতু বাঁধবে। গ্রাম শহরের মনের দূরত্ব ঘুচিয়ে তৈরি করবে নতুন জীবনশৈলী যার  ভিত রবীন্দ্রনাথের শ্রীনিকেতনের স্বপ্নে, গান্ধীর গ্রাম স্বরাজে।তারা প্রকৃতিকে শোষণ নয় প্রকৃতির সংরক্ষণের সংস্কৃতি গড়ে তুলবে।
 
        

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন