মোট পৃষ্ঠাদর্শন

রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

লতা মঙ্গেশকরঃ এক কিংবদন্তি ভারতীয় নারী

সঙ্গীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর আজ প্রয়াত হয়েছেন। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ এই সুরেলা কণ্ঠকে হারিয়ে শোকাভিভূত। অন্য সব ভারতীয়ের মতো আমিও তার গান শুনেই বড়ো হয়েছি, সুর দিয়ে নিজের আবেগকে চিনতে, বুঝতে শিখেছি। কিন্তু আজ যে কথা সবচেয়ে বেশি মনে হচ্ছে তিনি রক্ষণশীল ভারতীয় সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক। নয় দশকের জীবনকালে এক সাবলম্বী, দায়িত্বশীল নারীর জীবনযাপন করেছেন যিনি জীবৎকালেই সাফল্যের চূড়া ছুয়ে কিংবদন্তি। বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে লতা মঙ্গেশকর যখন চলচ্চিত্রে সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন তখন নারী সঙ্গীত শিল্পী ও চলচ্চিত্র শিল্প দুয়ের প্রতিই ভারতীয় সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল প্রতিকূল। লতা মঙ্গেশকর তার প্রতিভা, নিষ্ঠা ও মর্যাদাপূর্ণ যাপিত জীবন দিয়ে সেই প্রতিকূলতাকে আনুকুল্যে রূপান্তরিত করেছেন। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র সঙ্গীতের গায়িকাকে ভারতবর্ষ সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ভারতরত্নে সম্মানিত করেছে। লতা মঙ্গেশকরের জীবনের পথ ছিল সুকঠিন। কৈশোরে পিতৃহীন মেয়েটির যে সময় তার সংগীত প্রতিভাকে সম্বল করে লড়াই শুরু করেছিল সেইসময়কার ভারতীয় সমাজ নারীর শিল্পী হওয়ার, স্বাধীন, স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্নকেই অনুমোদন করত না। পুরুষ অভিভাবকদের নির্দেশ ও আদেশ অনুযায়ী পারিবারিক জীবনযাপনই ছিল একমাত্র কর্তব্য। কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই প্রতিভাময়ী শিল্পীর কাছে সমাজের রক্ষনশীলতাকে হার মানতে হয়েছিল। লতা মঙ্গেশকরের সংযমী, নিষ্ঠাপরায়ণ জীবনযাপন তার পেশাকেও তার মতো মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারতীয় মহিলা সঙ্গীত শিল্পীদের সম্মান প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য। তার গাওয়া প্রতিটি গান নারী জীবনের আবেগকে মূর্ত করেছে। রক্ষণশীল সমাজের নিয়মের বেড়াজালের মধ্যেও যে ভারতীয় নারীর আবেগ জীবন্ত লতা মঙ্গেশকরের গান তা প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১৯২৯ থেকে ২০২২ জীবনের দীর্ঘ যাত্রাপথে এই মহীয়সী নারীর স্বাধীন মর্যাদাপূর্ন জীবনযাপনকে সশ্রদ্ধ প্রণাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন