মোট পৃষ্ঠাদর্শন

সোমবার, ২০ জুলাই, ২০২০

গড়পড়তা বাঙালি নারীর সামাজিক ইমেজ

আজ একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে গড়পড়তা বাঙালি নারীর সামাজিক ইমেজ ঠিক কেমন? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আর আত্মজিজ্ঞাসা একই. সমাজের নানাস্তরের মেয়েদের সাথে কথা বলে, প্রতিদিনের ঘটনাক্রম, মিডিয়ায়, টিভি সিরিয়াল, সিনেমায়  মেয়েদের ভূমিকার যে উপস্থাপন দেখে মনে হয়েছে গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের আর্থিক অগ্রগতি হলেও মেয়েরা পুরুষতন্তের বেড়াজাল কেটে মানসিকভাবে খুব বেশি মুক্ত মনের হতে পারিনি। বিবাহ নামের সামাজিক প্রতিষ্ঠান মেয়েদের সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। সব নিজ্বসতা বিসর্জন দিয়ে পরিবারের কল্যানই যেন তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য।  পুরুষতন্তের বন্ধনগুলো ধর্ম, সামাজিকতা, সম্পর্কের চিরন্তরতা - নানা অছিলায় মেয়েদের আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে। যুক্তির থেকে আবেগ তাদেরকে পিছন পানে টেনে রেখেছে। এখনো এদেশের মেয়েরা মনে করে অপরের তা সে বাবা, মা, স্বামী, সন্তান - যেই হোক তার বা তাদের যুক্তিহীন আবদার রাখার দায় তার সর্বোপরি, তা যদি আত্মগ্লানিকর হয় তাও। যখন মনে হয় এই সমাজে মেয়েদের আত্মপরিচয় নির্মাণ অসম্ভব তখন হঠাৎ জানতে পারি উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ভারতের মীরাপন্থী মেয়েদের কথা. সাধিকা মীরাবাঈকে নতুন করে চিনতে মন চায়। এক একলা মেয়ের অন্যরকম পথ চলার গল্প, সমাজের প্রচলিত প্রথাকে একপাশে সরিয়ে রেখে নতুন জীবনশৈলী চর্চার গল্প। মীরাপন্থীরা আধুনিক শিক্ষা, সুযোগ সুবিধা না পেলেও মন থেকে তারা মুক্ত, স্বাধীন। এই স্ব এর অধীন হওয়াটা খুব জরুরি. মুক্ত, উদার মনন চর্চা ছাড়া আমরা কিছুতেই পুরুষতন্তের বানিয়ে দেওয়া ইমেজের খাঁচা থেকে মুক্তি পাবো না। এখন সময় এসেছে পুরানো চাপিয়ে দেওয়া ইমেজ ভেঙে নতুন ইমেজ গড়ার যেখানে মন হবে মুক্ত, যুক্তিবাদী, উদার, অতীতের ভারমুক্ত। 

শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

ফিরে চল মাটির টানে

সারি সারি সব হারানো মানুষ চলেছে নিজেরদের ফেলে আসা ঘরে, মাটির কাছে আশ্রয়ের আশায়। এ যেন মা বসুন্ধরার কাছে সীতার ফিরে যাওয়া। তবে এই প্রত্যাবর্তন তখনই অর্থবহ হবে যদি তা শুকিয়ে যাওয়া গ্রামীণ জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে পারে। পুরানো আধা সামন্ততান্ত্রিক গ্রামীণ সমাজ কাঠামোয় তা সম্ভব নয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সমান অধিকার আর পারস্পরিক শ্রদ্ধায় গঠিত সমাজ কাঠামোয় একমাত্র তা সম্ভব। সব হারিয়ে এই ফিরে আসা মানুষ যদি গ্রাম পুনর্গঠনের কাজে যোগ দেয় তবেই তা বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু করা দেবে নেতৃত্ব ? কোথা থেকে আসবে গ্রাম স্বরাজের নতুন ভাবনা, কর্মীর দল যারা হাত মেলাবে প্রান্তিক মানুষজনের সাথে, দেবে নতুন জীবনের মন্ত্র?  এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, কাজ শুরু হয়েছিল গ্রাম স্তরে কিন্তু সফল হয়নি। তাঁদের এই বিফলতাই বলে দেয় সৎ প্রচেষ্টা সফল হয়, স্থায়ী হয় তখনই যখন পরিপার্শ্ব সহায়ক হয় নয়তো সেই প্রচেষ্টার মরুদ্যানকে গ্রাস করে শত শত বছরের শোষণকারীদের আক্রোশ। আমাদের ভারতবর্ষের মূল সমস্যা তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের বৃহত্তর সমাজ থেকে, পিছিয়ে পড়া মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা যা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আরো বেশি হয়েছে। বিগত কয়েক দশক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সব সামাজিক দায় থেকে মুখ ফিরিয়ে আত্মকেন্দ্রিক স্বচ্ছল, সুখী হওয়ার সাধনায় মন দিয়েছিল। তারা হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসঙ্গ হয়েও সফল হয়েছে কিন্তু গ্রামে, শহরে দেশ গড়ার কারিগরের অভাবে সমাজ বদলের সব স্বপ্ন ধাক্কা খেয়েছে, হারিয়ে গেছে। আজ আবার ভারত তার নবীন, শিক্ষিত মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে যারা কৃষক, কারিগরদের যুগসঞ্চিত জ্ঞানের ভান্ডারকে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদের আধুনিক জ্ঞান, প্রযুক্তির সাথে সেতু বাঁধবে। গ্রাম শহরের মনের দূরত্ব ঘুচিয়ে তৈরি করবে নতুন জীবনশৈলী যার  ভিত রবীন্দ্রনাথের শ্রীনিকেতনের স্বপ্নে, গান্ধীর গ্রাম স্বরাজে।তারা প্রকৃতিকে শোষণ নয় প্রকৃতির সংরক্ষণের সংস্কৃতি গড়ে তুলবে।
 
        

রবিবার, ৩ মে, ২০২০

সত্যজিৎ রায় ১০০

১০০ বছর পার অনেকখানি সময় চলে গেছে , বদলেছে প্রেক্ষাপট। বিগত শতাব্দীতে স্বাধীনতা আন্দোলন, বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশভাগ, স্বাধীনতা, গণ আন্দোলন, বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আমাদের দেশ, সমাজকে নিয়ে গেছে নানা ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে দিয়ে। সময়ের এই কঠিন মন্থন আমাদের থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছিল ঠিকই তবে সৃষ্টি করেছিল কিছু অমূল্য মানব রত্ন। সত্যজিৎ রায় এমনই এক অমূল্য মানব রত্ন। আজ ২রা মে তাঁর শততম জন্মদিন, এই পণ্য সর্বস্ব, মনন চর্চার দৈন্যতার সময়কালে তাঁর রেখে যাওয়া মেধা চর্চা, সৃষ্টিশীলতার উত্তরাধিকারকে ফিরে দেখতে ইচ্ছা হয়। স্বাধীনতা পূর্ব  ইংরেজ শাসনাধীন ভারতবর্ষে প্রায় দুশতাব্দী প্রগতিশীল ভারতীয়রা সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে  সংস্কারের মধ্য দিয়ে যে মুক্ত চিন্তার দেশ গড়তে চেয়েছিলেন  সত্যজিৎ ছিলেন সেই সাধনার উত্তরসূরি।আজ আমরা যখন চিন্তা করতে, প্রশ্ন করতে ভুলে যাচ্ছি তখন সত্যজিৎ-এর হীরক রাজার দেশের মগজ ধোলাই যন্ত্রের কথা মনে পড়ে। রবীন্দ্রনাথের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বহন করে রক্তকরবীর বার্তা নূতন করে তিনি বললেন হীরক রাজার দেশে চলচ্চিত্রে। গুপী গাইন বাঘা বাইন গাইল 'নহি যন্ত্র, আমি প্রানী'। তাঁর সমস্ত সৃষ্টিতে তিনি মানব দরদী। সাহিত্যিক সত্যজিৎ আমাদের শৈশবকে অন্য রঙে রাঙিয়ে ছিলেন। আগুন্তুকের সাত্যকির মতো শিখেছিলাম কখনো কূপমন্ডুক হব না। বিশ্বজনীনতার এক অন্য ভাষা শিখেছিল আমাদের প্রজন্ম। কিন্তু আজ প্রতি মূহূর্তে মনে হয় সত্যজিৎ-এর সৃৃৃষ্টির সেই মূল্যবোধ আজকেের 'আমাকেে দেখুন' সমাজে কোথায় যেন হারিয়ে  গেছে। আমরা কী সন্ধান পাব সেই হারানো মানিকের?
[আলোকচিত্রটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]

বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০২০

বসুন্ধরা দিবস ২০২০

আজ বসুন্ধরা দিবস, বিগত ৫০ বছর মানুষ এই দিনটা পালন করছে পৃথিবীকে ভালো রাখার, ভালোবাসার অঙ্গীকার করতে। কিন্তু গত ৫০ বছরে পৃথিবীর স্বাস্থ্য ক্রমাগত খারাপ হয়েছে মানব সভ্যতার ক্রম উন্নয়নে। পৃথিবীর অনেক না- মানুষ বাসিন্দারা মানুষের অত্যাচারে ক্রমাগত কোনঠাসা হতে হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে আর বাকিরা কোনোরকমে টিকে আছে। মানুষ বড়ো বড়ো বাঁধ তৈরী করেছে নদী জলশূণ্য হয়ে গেছে, জলজ প্রাণ বৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে, ভিটে মাটি জীবন জীবিকা হারিয়ে গেছে নদীর পাড়ের অসংখ্য প্রান্তিক মানুষের। দুশতকে মানুষ দুর্নিবার গতিতে এগিয়েছে - ডিনামাইট পাহাড় ভেঙেছে, খনি থেকে আকর উঠেছে, মহাকাশে স্যাটেলাইট বসেছে, যোগাযোগ দুনিয়ায় বিপ্লব হয়েছে  আরো কত কী, কিন্ত তার সাথে মানুষ ও অসংখ্য জীবের বাসভূমি বসুন্ধ্ররার ক্ষতি হয়েছে অপূরনীয়।  কী দিয়ে পূরণ হবে এ ক্ষতি? ভালবাসা দিয়ে, সহমর্মিতা দিয়ে। যেদিন সব মানুষ মেনে নেবে এই পৃথিবীতে তার সম অধিকার সকল জীবের, বিশ্বাস করবে এই পৃথিবী নামক নীল গ্রহটা আমাদের সকলের বাড়ি সেদিন থেকেই পৃথিবী সুস্থ হবে। গত প্রায় একমাসে, COVID-19 -এর জন্য পৃথিবী জোড়া লকডাউন প্রমান করেছে মানুষ একটু থেমে থাকলে জীবধাত্রী বসুন্ধরা কত ভালো থাকে। আমরা যদি প্রতিদিনের জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুখ ফিরিয়ে আমাদের না-মানুষ প্রতিবেশীদের কথা একটু ভাবি, তাদের একমুঠো খাবার দিই, কী গাছটাকে বাঁচিয়ে তুলি, জীবনের প্রয়োজনটা একটু কমিয়ে নিই, অপচয় কম করি, সারারাত তীব্র আলো জ্বালার আগে একবার ভাবি পাখিদের ঘুমাতে কষ্ট হয় - এরকম ছোট ছোট কাজগুলোই হয়তো পৃথিবীর অসুখ সারবে। পৃথিবীকে ভালোবাসলেই নতুন যুগের সব গ্রেটা থুনবার্গরা ভালো থাকবে, আনন্দে থাকবে।

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০

ভিড়তন্ত্র

ভিড় - নামহীন মানুষের জটলা জনবহুল এলাকায় যেকোনো সময় জড়ো হয় কারনে, অকারনে। যুক্তিপূর্ন আলোচনার চাইতে গুজবেই ভিড়ের অনেক বেশি আস্থা। অনেক সময়ই এই ভিড় উন্মত্ত জনতায় পরিনত হয় কোনো কারন ছাড়াই। এমন নয় যে শুধু লেখাপড়া না জানা লোকেরাই বা কম লেখাপড়া জানা মানুষেই ভিড় তৈরী করে, শিক্ষিত মানুষও সামিল হয় নির্দ্বিধায়। ভিড়ের মূল আনন্দ নিপীড়নের তা সে লোকালয়ে ঢুকে আসা বন্য জন্তুই হোক বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি বিশেষ। সভ্যতার আদিকাল থেকেই এই ভিড়তন্ত্র খুব বলশালী। কখনো কোনো মহিলাকে ডাইনি সন্দেহে তো কখনো পথভোলা ভবঘুরেকে ছেলেধরা সন্দেহে পিঠিয়ে মারে। এই ভিড় যেকোনো নিরীহ বোকাসোকা মানুষকেও নৃশংস খুনী করে তোলে, ভিড় জানে তার অবয়বহীনতা তাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করবে। এই ভিড় যখন ধর্মবিদ্বেষ বা জাতি বিদ্বেষের রসদ পায় তখন সে জাঁকিয়ে বসে সমাজে আর দাবি করতে থাকে ভিড়ের উৎপাত হল সমাজের স্বতঃস্ফুর্ত বহিঃপ্রকাশ। এখন সোশাল মিডিয়াকে ভিড়তন্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেছে তাদের নৃশংস নিপীড়নের দর্শক বৃদ্ধি করতে, আরো ভিড় তৈরীতে। নানা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নিজেদের উদ্দেশ্যে এই ভিড়ের উন্মত্তাকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। কিন্তু এখন  সময় হয়েছে ভিড়তন্ত্রকে নিয়ন্ত্রন করার নয়তো এই ভিড়তন্ত্র আমাদের নিয়ন্ত্রন করবে। আমরা আইনের শাসনের পূর্ববর্তী যুগে ফিরে যাব।





শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০

করোনার গ্রাসে আমার দেশ

সারা বিশ্বের মত আজ আমার দেশ ভারতবর্ষেও করোনা নামক রোগ দাপিয়ে বেড়াচ্ছ, চারিদিকে ভয়, অবিশ্বাস আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কা। ভয় রোগ ছাড়া রুটি রুজিরও। দরিদ্র মানুষের ভয় আরো বেশি। ক্ষুধা, আশ্রয়হীনতা ইতিমধ্যেই থাবা বসিয়েছে তাদের জীবনে। কোটি, কোটি পরিযায়ী শ্রমিক, ছোট চাষী, ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক, পথবাসী মানুষ,  কাগজকুড়ানি - এমন অগুনতি সমাজের প্রান্তিক মানুষ সব চাইতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। তাদের এই অসহায়তার  ছবি অনেকদিন পর জানান দিয়েছে এই সমাজে তারা বিজ্ঞাপিত না হয়ে থাকলেও, প্রায় অদৃশ্য হলেও তারাই এই সমাজের পিলসুজ। সভ্যতার আলোক তারাই বহন করে। এই বঞ্চিত মানুষগুলোই সভ্যতাকে সচল রাখে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, সুচিকিৎসা, সৌহার্দ্য দিয়ে জনকল্যানকামী রাষ্ট্র কতখানি পারবে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে নানা ধর্ম, বর্ণ, ভাষার এই বিশাল দেশকে আগলে রাখতে সেটাই দেখার।আমার শহর 'রেড+ জোনে', এখানে অটো চালক, ই-রিকশা চালক, ফুচকাওয়ালা রুজির টানে সবাই সবজি বিক্রেতা। আজ দুধ সংগ্রহে গিয়ে দেখি পাড়ার অনেক স্বচ্ছল মানুষ বস্তিতে মানুষদের সাহায্য প্রাপ্তিকেও বাঁকা চোখে দেখছে। তবে নানা সংস্থা, ধর্মীয় সংগঠন, কিছু সাধারণ মানুষ নিজেদের মতো করে সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে এটাই স্বস্তির। এই যুদ্ধে মানুষ ও মনুষ্যত্ব দুই জয়লাভ করুক এই প্রার্থনা।